রাসূল প্রেম ও গোস্তাখে রাসূলের শাস্তি ২০২৫

রাসূল প্রেম ও গোস্তাখে রাসূলের শাস্তি ২০২৫

এই পোস্টে যা যা পাবেন

    রাসূল প্রেম ও গোস্তাখে রাসূলের শাস্তি
    রাসূল প্রেম ও গোস্তাখে রাসূলের শাস্তি
    লেখকঃ মুফতি আব্দুল হান্নান হাবীব

    অগণন মানুষ। দৃষ্টি সীমার শেষ পর্যন্ত। প্রায় সকলেই শুভ-সফেদ পোশাকে আবৃত। তেজদীপ্ত এবং বিক্ষুব্ধ। নদী তরঙ্গের মতো এগিয়ে চলছে সম্মুখে। যেন অবিরাম গতিতে ছুঠে চলা কোনো স্রোতধারা। এ এক বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার। থামাবার হিম্মত কারো নেই। ওরা নবী প্রেমিক। রাসূলের ভালোবাসায় সিক্ত। পৃথিবীর সব কিছুর ঊর্ধ্বে ওদের রাসূল; যিনি পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র থেকেও দামী এবং প্রিয়। চোখের পলকে নিজেদের একমাত্র প্রাণটাও কুরবান করে দিতে পারে রাসূল প্রেমে। অকাতরে বিলিয়ে দিতে পারে জীবনের সব কিছু এবং সমস্ত অর্জন। আজ ওরা রাসূলের জন্য লড়ছে। কাফের জালেমদের বিরুদ্ধে একসাথে। সর্বত্রই তেজদীপ্ত কন্ঠে ধ্বনি প্রতি:ধ্বনিত হচ্ছে- “নারায়ে তাকবীর; আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। বিশ্ব নবীর অপমান; সইবেনারে মুসলমান। বীর মুজাহিদ অস্ত্র ধরো; শাতিমে রাসূলের বিচার করো।” আর সব চেয়ে বেশী যে ধ্বনি উচ্চকিত হচ্ছে তাহলো “ ফ্রান্সের পন্য; বর্জন করো করতে হবে। ফ্রান্সের দূতাবাস; বন্ধ করো করতে হবে। ম্যাক্রোঁর দুই গালে; জুতা মারো তালে তালে।” ইত্যাদি মুহুর্মুহু শ্লোগান চলছে তো চলছেই।

    ঘটনার সূত্রপাত

    গত ১৬ অক্টোবর ২০২১ ঈসায়ী। মধ্যে দুপুর কিংবা তারও কিছু আগে। ফ্রান্সের বিখ্যাত প্যারিসের শহরতলী এলাকায় গলা কেটে হত্যা করা হয় এক স্কুল শিক্ষককে। যে দুর্ভাগা মুসলিম বিশ্বের হৃদয়ের স্পন্দন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মানব, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্লাসে কার্টুন দেখিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করেছিল। প্রথমে ছোট ছোট শিক্ষার্থী তারপর অভিভাবক কর্তৃক নিষেধ সত্ত্বেও ওই দুর্ভাগা-রাসূলের শানে গোস্তাখী করতেই থাকে। এমনকি অভিযোগকরা সত্ত্বেও স্কুল কতৃপক্ষও বিষয়টি কোন আমলে নেয় নি। তারপর রাসূল প্রেমে দেওয়া হয়ে অজ্ঞাত এক মুসলিম তরুণ সেই স্কুল শিক্ষক কে হত্যা করে।

    খবরে জানা যায়, প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁনের উপস্থিতিতে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শনের পর সেই দুর্ভাগা স্কুল শিক্ষককে সমাধিস্থ করা হয়। মত প্রকাশ ও বিবেকের স্বাধীতার জন্য এই হত্যাকান্ড কে বড় হুমকি মনে করেছে দেশটির মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই বিতর্কিত কার্টুনটি সমানে প্রচার করতে শুরু করেছে তারা। খবরে আরও জানা যায়, ফ্রান্সের সরকারি বহুতল ভবনেও প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হচ্ছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ব্যঙ্গ করা সেই কার্টুন।

    আমাদের করণীয়

    ব্যক্তিগত পর্যায় ছাড়াও রাষ্ট্রীয়ভাবে রাসূলের শানে বেআদবীর চিত্র বর্তমানে পরিলক্ষিত হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে গোস্তাখে রাসূলের বিরুদ্ধে আমাদের করণীয় সম্পর্কে বর্তমান উলামায়ে কেরام প্রাথমিকভাবে পণ্য বয়কটের নির্দেশনা দেন।

    ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গোস্তাখে রাসূলকে প্রশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গে বিশ্ব বিখ্যাত আলেম মুফতী তাকী উসমানী দা.বা. এক টুইটবার্তায় লিখেছেন- দোজাহানের বাদশাহ হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে ফ্রান্স এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, তার পরেও কি কোনো মুসলমানের পক্ষে এটা সম্ভব যে, দেশটির (ফ্রান্সের) পণ্য কেনা-বেচা বা আমদানী-রপ্তানী করবে! এই সম্পদ পূজারিদের তখনই উচিত শিক্ষা হবে যখন ইসলামি বিশ্ব তাদের পণ্য বয়কট করবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে এটা সর্বনিম্ন প্রতিক্রিয়া, যা আমরা এই মুহুর্তে দেখাতে পারি।

    ইসলামে পণ্যবয়কট

    পণ্যবর্জনকে অনেকে হালকাভাবে দেখে থাকে। বাস্তবে পণ্যবর্জন হালকা কিছু নয়; বরং এক মারাত্মক হাতিয়ার। এর মাধ্যমে বস্তুবাদীদের অর্থনৈতিক প্রাসাদ ধ্বসিয়ে দেওয়া সম্ভব। উদাহরণত, ২০০৪ সালে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে মুসলিমবিশ্বের পণ্যবয়কট তাদের অর্থনীতিতে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছিল।

    ইসলামের ইতিহাসে ‘পণ্যবয়কটের জনক’ নামে পরিচিত হযরত ছুমামা ইবনে উসাল রাযি.। ইয়ামামা অঞ্চলের হানীফা গোত্রের সর্দার ছিলেন তিনি। যুদ্ধবন্দী হয়ে মদীনায় আসেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর নবীজীর অনুমতি নিয়ে উমরা করতে মক্কা গমন করেন এবং ঘোষণা দেন, “আল্লাহর কসম! এখন থেকে ইয়ামামা হতে তোমাদের কাছে যবের একটা দানাও পৌঁছবে না, যতক্ষণ না আল্লাহর রাসূল অনুমতি দেন!” ইয়ামামা থেকে খাদ্যপণ্য আসা বন্ধ হয়ে গেলে আমদানী-নির্ভর মক্কায় অভাব দেখা দেয়। বাধ্য হয়ে মক্কার প্রতিনিধিদল মদীনায় এসে প্রতিকার কামনা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বয়কট প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন।

    গোস্তাখে রাসূলের শাস্তি

    কুরআন হাদীস ও মুজতাহিদ ইমামগনের ইজমা তথা সর্বসম্মত মত অনুসারে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, যে ব্যক্তি কুরআন ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে কটুক্তি করবে, গালাগালি করবে, অসম¥ান করবে এমন ধর্মদ্রোহী মুরতাদের শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। এ ব্যাপারে উলামায়ে ইসলাম একমত।

    ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয় দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য অভিশম্পাত করেন। আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অপমানজনক শাস্তি।’ [সূরা আহযাব; আয়াত ৫৭]। তার পরবর্তী আয়াতে এসব অভিশপ্তদের শাস্তি বর্ণনা করা হচ্ছে, ‘অভিশপ্ত অবস্থায় তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে গ্রেফতার করা হবে এবং হত্যা করা হবে।’ [সূরা আহযাব; আয়াত ৬১ -৬২]

    শেষকথা

    প্রিয় পাঠক! আমরা মুখে স্বীকার করি: পরমপ্রিয় মাতা-পিতা, কলিজার টুকরো সন্তান, প্রিয়তমা স্ত্রী এবং জানমাল, ইজ্জত আব্রæর চেয়েও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে প্রিয় ও সম্মানিত। কিন্তু আমাদের চলন-বলনে, আচরণ ও উচ্চারণে-এক কথায় যাপিত জীবনের সকল অঙ্গনে কি আমরা এর সত্যতা প্রমাণ করতে পারছি? আমরা কি পারছি জীবন পরিক্রমার প্রতিটি ধাপে এবং প্রতিটি পদক্ষেপে রাসূলের চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দিতে?

    সাধারণ জিজ্ঞাস্য (FAQs)

    কি ঘটনার পর রাসূল প্রেমিকরা ফ্রান্সের পণ্য বর্জন শুরু করে?

    ২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর ফ্রান্সে এক স্কুল শিক্ষককে হত্যা করা হয়, যিনি রাসূল (সাঃ) কে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন দেখিয়েছিলেন। এর প্রতিবাদে মুসলিম বিশ্ব ফ্রান্সের পণ্য বর্জন শুরু করে।

    ইসলামে গোস্তাখে রাসূলের শাস্তি কী?

    কুরআন, হাদিস ও উলামায়ে কেরামের ইজমা অনুসারে, গোস্তাখে রাসূলের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তবে তওবা করলে শাস্তি কমে যেতে পারে।

    পণ্য বর্জন কতটা কার্যকর?

    পণ্য বর্জন একটি শক্তিশালী অস্ত্র। ২০০৪ সালে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বের পণ্য বর্জন তাদের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছিল।

    বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে ধর্মদ্রোহীর শাস্তি কেমন?

    ইসলাম ছাড়াও, ইহুদী ও খ্রিস্টধর্মেও ধর্মদ্রোহীর জন্য কঠোর শাস্তি, এমনকি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।

    এখানে আপনার মতামত দিন 🥰

    মন্তব্য করুন
    Refresh